
তাইওানে চীনপন্থীরা নির্বাচন জিতছে। এর মানে দাঁড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের সফট পাওয়ার সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হতে শুরু করেছে উন্নত বিশ্বে। যুক্তরাজ্যে নতুন সমাজতান্ত্রিক দল মাত্র ১ সপ্তাহেই এক নম্বর দল হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কমিউনিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা জেন-জি অর্থাৎ যুবাদের মধ্যে প্রচন্ড জনপ্রিয় হচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায় চীনের উত্থানকে উন্নত বিশ্ব সমাজতন্ত্রের উত্থান বলেই মেনে নিতে শুরু করেছে। রাশিয়াতেও খোদ মস্কোতে ষাট বছর পর স্টালিনের প্রতিকৃতি বিভিন্ন জায়গায় উন্মোচিত হচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায় রুশভাষীরা শিক্ষা নিতে শুরু করেছে যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যেভাবে বিশ্লেষণ করেছিল জোসেফ স্টালিনকে সেটাই সঠিক বিশ্লেষণ। এদিকে শোনা যাচ্ছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর থেকে যে মার্কিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোম্পানিগুলোকে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে পরাজিত করতে শুরু করেছে। অর্থাৎ হাইটেকেও চীন আস্তে আস্তে এক নম্বর জায়গা দখল করছে।
বিশ্বের এই পরিবর্তনগুলো এখনো পর্যন্ত বাংলা বদ্বীপে সেভাবে অনুভূত হয়নি। এই পরিবর্তনগুলোকে বোঝার মতো পর্যাপ্ত শিক্ষাও বাংলা বদ্বীপের মানুষের এখনো হয়নি। ফলত বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বাঙালিরা যে আস্তে আস্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তের দিকে এগোচ্ছে সেটা তারা বুঝতে পারছে না। বাঙালি বুঝতে না পারলেও চীনের উত্থান ক্রমেই ঐতিহাসিক পটভূমিকা তৈরি করছে বাংলার বদ্বীপে।
একদিকে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী লুটেরা পুঁজি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে উৎপাদক পুঁজি, সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিক শ্রেণীর মিলিত আক্রমণের মুখে। এই আক্রমণ কিভাবে আরো শক্তিশালী করে লুটেরা পুঁজিকে উচ্ছেদ করা যায় সেটা বোঝাই বাংলাদেশের বিপ্লবীদের কাজ। অন্যদিকে ভারতে ২০২৬ এর পরে রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে হিন্দিভাষী ভোটব্যাঙ্ক ও গুজরাটি মারওয়ারি পুঁজি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে চলেছে। এই জন্য ভয় পেয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন তামিলনাড়ুর স্বায়ত্তশাসন চেয়েছে। আবার ভারত রাষ্ট্র আদিবাসী বাঙালি ও মুসলমান উচ্ছেদ করতে উদ্যত হয়েছে। এর পরিণতিতে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাগত জাতি বাঙালি ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। ভারতে বাঙালি বিপ্লবীদের কর্তব্য হলো দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে গুজরাটি মারওয়ারি পুঁজি ও হিন্দিভাষী ভোটব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রিত ভারত রাষ্ট্র যে বাঙালি জাতির আসল শত্রু সেটাকে তুলে ধরা। ভারতে বাঙালি জাতির লড়াইকে স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াইতে পরিণত করাই ভারতের বাঙালি বিপ্লবীদের আসু কর্তব্য।
এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে চীনের উত্থানের ফলেই ভারতের লাগাম বাংলাদেশে আলগা হয়েছে এবং বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী লুটেরা পুঁজি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অন্যদিকে চীনের উত্থানের ফলেই ভারত আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে গেছে এবং ভারত রাষ্ট্র নিজের উন্নয়ন তরান্বিত করতে গিয়ে আদিবাসী মুসলমান ও বাঙ্গালীদের সঙ্গে আরও বেশি বেশি করে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। এর সহজ অর্থনৈতিক কারণ হলো উন্নয়ন উচ্ছেদ ছাড়া হয় না। অতএব ভারত রাষ্ট্রকে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গেলে দ্রুত উচ্ছেদ করে উন্নয়নে গতি আনতে হবে। এই দ্বন্দ্ব সহজে মেটার নয় চীনের উত্থান এই দ্বন্দ্বকে আরো ধারালো করে দিতে চলেছে।
Author: Saikat Bhattacharya