world order

গত এক বছরে চীন সফরের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ:

07-July-2025 by east is rising 23

বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের প্রায় এক বছরে দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা চীন সফর করেছেন। চীন সরকারের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত এসব সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে এবং উন্নয়ন সহযোগিতার বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন সরকারের সমতাভিত্তিক ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় উষ্ণতর হয়েছে এবং বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রগঠনে এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গত এক বছরে চীন সফরের ধারাবাহিকতা পর্যবেক্ষণ:

বাংলাদেশের সরকার প্রধান ও বিভিন্ন দলীয় প্রতিনিধিদের সাম্প্রতিক চীন সফরের দিকে নজর দেওয়া যাক।

১. ৭ নভেম্বর ২০২৪– বিএনপি প্রতিনিধিদল: অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় ২০২৪ সালের নভেম্বরের শুরুতে বিএনপির চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীন সফর করে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (CPC)-এর আমন্ত্রণে। এই সফরের মাধ্যমে চীনা নেতৃত্বের সাথে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক যোগাযোগ শুরু হয় এবং নতুন সরকারের পর চীনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিত মিলে।

২. ২৭ নভেম্বর-৫ ডিসেম্বর ২০২৪: প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল চীনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির (CPC) আমন্ত্রণে বেইজিং সফর করে। ১৪ সদস্যের এই দলটির নেতৃত্ব দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এই দলে খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারাও ছিলেন। চীনের সিনচিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ পরিদর্শন ছিল এই সফরের অন্যতম প্রধান অংশ। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দেশটির সব বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চীন যে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে, এই সফর তারই ধারাবাহিকতা। দেশের অন্যান্য দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিশ্চিত করতেই চীনের এই পদক্ষেপ।

সফর শুরুর আগে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ইসলামি দলের নেতাদের সম্মানে এক বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন এবং সেখানে স্পষ্ট বলেন যে বাংলাদেশ বর্তমানে এক “ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে” দাঁড়িয়ে। তিনি ঘোষণা দেন, চীন বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজের সব স্তরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা আরো গভীর করতে চাইছে। রাষ্ট্রদূতের ভাষায়, “এই সৌহার্দ্যপূর্ণ চীন সফরকে দু’দেশের দলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর নতুন সূচনা বলে দেখা উচিত, যাতে চীন-বাংলাদেশ সার্বিক কৌশলগত অংশীদারত্ব আগামী দিনে আরও সুসংহত হয় এবং দুই দেশের জনগণ উপকৃত হন।”অর্থাৎ, আসন্ন দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, চীন নিজেকে সকল পক্ষের বিশ্বস্ত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে।

৩. জানুয়ারি ২০২৫– বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফর: ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নতুন সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম বিদেশ সফরে বেইজিং আসেন। সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে তার বৈঠক হয় এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্বের সব সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বার্তা দেওয়া হয়। এই বৈঠকে তৌহিদ হোসেন চীনের দেয়া ঋণের সুদের হার কমানো ও পরিশোধ সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ জানান এবং চীন ইতিবাচক সাড়া দিয়ে ঋণের পরিপক্বতার মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়। দুই দেশের এই উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৪. ২৪ ফেব্রুয়ারি– ৬ মার্চ ২০২৫– বহু-দলীয় মৈত্রী প্রতিনিধিদল: ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে এক অনন্য উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক শ্রেণীর প্রতিনিধিদের নিয়ে ২২ সদস্যের একটি ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী’ প্রতিনিধিদল চীন সফর করে। এই দলের নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং এতে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন ছাড়াও নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, জাতীয় দলসহ মোট আটটি দলের নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিকরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ১৩ দিনব্যাপী এই সফরে প্রতিনিধি দলটি বেইজিং, শানশি ও ইউনান প্রদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আধুনিক প্রযুক্তি কোম্পানি (যেমন BYD, LONGi, iFlytek) এবং অবকাঠামো প্রকল্প পরিদর্শন করে। সফরকালীন বিভিন্ন সদস্য চীনের চোখধাঁধানো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও অবকাঠামো দেখে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে এমন অগ্রগতির প্রতিফলন চেয়েছেন। প্রতিনিধি দলের নেতা মঈন খান মন্তব্য করেন যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলভাবে চীনের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

তরুণ প্রতিনিধি ও ছাত্রনেতা আলী আহসান জোনায়েদ চীনের আধুনিকায়ন ও জনগণের দেশপ্রেম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ চীনকে নিবিড় বন্ধু বলে মনে করে এবং সকল দেশকে সমমর্যাদায় দেখতে চায়; কোনো তৃতীয় পক্ষের চাপ বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই চীনের মত পারস্পরিক সম্মানপূর্ণ সহযোগিতাই তাদের কাম্য।

৫. ২৬–২৯ মার্চ ২০২৫ – প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় সফর: গত এক বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শিখরে পৌঁছানো ঘটনা হলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চারদিনের চীন সফর। ২৬ মার্চ তিনি হাইনানে বোআও এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন এবং ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক করেন।

এই ঐতিহাসিক সফরে চীন-বাংলাদেশের মধ্যে ১টি অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি এবং ৮টি পৃথক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকগুলোর আওতায় দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ-প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক বিনিময়, সংবাদ ও গণমাধ্যম বিনিময়, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া শীর্ষ বৈঠকে পাঁচটি মৌলিক ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের সহায়তায় একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করা, মোংলা بندরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, বাংলাদেশে একটি রোবোটিক ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন এবং একটি মোবাইল কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট প্রদানের প্রতিশ্রুতি।

চীনা প্রেসিডেন্ট এই বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং দুই দেশের সমগ্রৌশলিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। ফলশ্রুতিতে দুই দেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অধীনে চলমান প্রকল্পগুলো গতিশীল করে আরও উচ্চমানের যৌথ উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

৬. ২২–২৭ জুন ২০২৫– বিএনপি উচ্চপর্যায়ী দলীয় সফর: বছরের মাঝামাঝি সময়ে চীনা নেতৃত্ব বাংলাদেশের সম্ভাব্য আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মূলধারার দলগুলোকেও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করেছে। ২২ জুন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঁচ দিনের সফরে বেইজিং পৌঁছে CPC’র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ নেতা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সফরে চীনা পক্ষ আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত যে সরকারই আসুক, তার সাথে আন্তরিকভাবে কাজ করার দৃঢ় আগ্রহের কথা জানিয়েছে বলে মির্জা ফখরুল ঢাকায় ফিরে জানিয়েছেন। আলোচনায় দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে চীনের সহযোগিতার বিষয়টি বিএনপি প্রতিনিধি দল তুলে ধরে এবং চীনা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেন। মির্জা ফখরুল ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এ সফরের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিসি এবং বিএনপির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে একটি দুই-বছর মেয়াদী রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব, যা বিএনপি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।

দলীয় পর্যায়ের এই সমঝোতা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও চীন-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার প্রত্যাশাকে শক্তিশালী করে।

সফরগুলোর ইতিবাচক প্রভাব ও বিশ্লেষণ

উপরে বর্ণিত ধারাবাহিক সফরগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের পর চীনের সাথে সম্পর্কের এক নতুন উষ্ণ অধ্যায় সূচিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা ও বেইজিং পরস্পরের আরও কাছাকাছি এসেছে, যার প্রতিফলন হলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক উচ্চস্তরের বৈঠক ও সফর। চীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ গুরুত্ব ও স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মুন্সি ফয়েজ আহমেদের মতে, চীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে একটি নিয়মিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদায় গ্রহণ করে যেসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্থবির ছিল সেগুলো আবার সচল করেছে এবং ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের বিপরীতে চীনের সাথে সম্পর্ককে নতুন গতি দিয়েছে, যা এই সরকারের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। পশ্চিমা কিছু রাষ্ট্র যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে দ্বিধায় ছিল, সেখানে চীন দ্বিধাহীনভাবে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তিস্তা নদী প্রকল্পের মতো বিষয়ে এগিয়ে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় চীনের এই অকুণ্ঠ সহযোগিতা দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।

এদিকে সরকার-বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল হয়েও বিএনপি চীনের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে একইরূপ ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে, যা সম্প্রতি তাদের দলের উচ্চপর্যায় থেকে প্রকাশিত বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। চীন সফর শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন যে চীন বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী এবং বিএনপিও ক্ষমতায় গেলে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে চীনের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। বেইজিং বৈঠকগুলোতে বিএনপি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে এবং চীন সেসব বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে পারস্পরিক রাজনৈতিক বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে এবং দুই দলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রধান পক্ষগুলোই এখন চীনের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী এবং উন্নয়ন সহযোগিতাকে রাজনৈতিক কনসেনশাস হিসেবে গ্রহণ করছে।

সর্বোপরি, গত এক বছরে অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকার এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের নেতাদের ধারাবাহিক চীন সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। চীনের ঋণ-সহায়তার সুদহার হ্রাস থেকে শুরু করে অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ, বন্দর উন্নয়ন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিনিময়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা – প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশের গণমানুষের প্রত্যাশা, এ ধরনের সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতি আনবে এবং একইসাথে বহুমুখী কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে দেশের সার্বভৌম উন্নয়নযাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে চীনের সাথে গঠিত এই ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ অংশীদারত্ব অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ তার নতুন পর্বে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে দৃঢ় অগ্রসর হতে পারবে, এবং সকল রাজনৈতিক পক্ষের সমর্থনে জাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিদেশী সহযোগিতা সুনিশ্চিত থাকবে।

মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি বাংলা, বেইজিং।

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like