পশ্চীম বঙ্গের স্বায়াত্বশাসন চাই

25-July-2025 by east is rising 45

ভারতের মতো বৃহত্তর বহু অঙ্গরাজ্যভিত্তিক রাষ্ট্রে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিষয় ছাড়া সকল বিষয়ে রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন থাকা উচিত তবেই বহুজাতিক বহু রাজ্যর মধ্যে আর পরাধীনতার আর শোষণের বিষয় ফুটে উঠবে না।
অঙ্গ রাজ্যগুলো হতে আদায়কৃত ট্যাক্স সমপরিমাণেই একটা অংশ রেখে সেটা রাজ্যকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
এবার বলি কেন একটা অংশ কেন্দ্র রাখবে?।
কেন্দ্র ঐ অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে রাজ্যেরই জনতার মাধ্যমে সেই রাজ্যের স্থল,জল ও আকাশসীমা রক্ষার সুব্যবস্থা এবং ঐ অঙ্গরাজ্যের রাজ্যিক সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।
আমরা অতীতেও দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্য পরবর্তীতে এই অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় শাসনের এবং শোষণের চাপে নিজেদের স্বাধীন করে ফেলেছে। এমনকি আজ থেকে পঞ্চপঞ্চাশ বছর আগে এই ঘটনার ফলেই  পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান হতে আলাদা হয়ে গেছে।
অথচো এই পাকিস্তান ইসলামী ভাতৃত্বের আবহেই গড়ে উঠেছিল।
এবার ভারতে এই সমস্যা কখনোই জটিল কখনো হয়নি তার কারণ এখানে বেশিরভাগই বহুজাতিক জাতিগুলোর জনবল খুবই কম।
সবথেকে বড় কথা হলো সুদীর্ঘ এই আটাত্তর বছরেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী বেশিরভাগ সময়ই নির্বাচিত হয়েছে পূর্বোক্ত সম্রাট আকবরের "হিন্দুস্তান" অঞ্চলের বর্তমান হিন্দি ভূমি হতেই, ভারতের বিভিন্ন জাতি এই নিয়ে কখনোই বিরোধ করেনি তার অন্যতম একটা কারণ ভারতীয় দক্ষিণাংশ ছাড়া তাদের অর্থনৈতিক শক্তি ও ছিল না এবং তাদের জনতাও এই নিয়ে আপত্তি কখনোই তোলে নি।
সবথেকে বড় কথা এই ভারতের শাসনক্ষমতা সবসময় যে পুঁজিপতি সমাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে তারা হলো মাড়োয়ারি এবং গুজরাটি।
যেহেতু হিন্দি ভোটব্যাঙ্ক বেশি (45%-2014 সাল অবধি) তাই এই গুজরাটি মাড়োয়ারি সাম্রাজ্যবাদীদের অতি আপন কোন হিন্দিভাষী লিডারকেই তারা একমাত্র চয়েস হিসেবে ঠিক করে এবং নির্বাচিত করে।
উল্লেখ্য এখানে হিন্দি ভোটব্যাঙ্কের মন পেতে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আড়াল করে গুজরাটি মাড়োয়ারি লবি হিন্দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা করা হুড়কো সুরসুরি ও দেয়।
এতেই আজো বেশিরভাগই অনুন্নত ও অশিক্ষিত হয়ে থাকা হিন্দি ভোটব্যাঙ্ক খুশি হয়ে যায় এবং গুজরাটি মাড়োয়ারি পুঁজিপতিদের নিজেদের অর্থনৈতিক মসিহ হিসেবে মেনে নেয়।
তারা এটা ভাবে ক্ষমতা তাদের হাতে,আসলে প্রধানমন্ত্রী যে হিন্দিভাষী কিন্তু আদতে এখানে হিন্দিভাষী প্রধানমন্ত্রী কিন্তু শুধুমাত্র একটা পুতুল, দাবার গুটি ঠিক করে ঐ গুজরাটি মাড়োয়ারি পুঁজিপতিদের লবিই।
গুজরাটি মাড়োয়ারি লবিই মূল আজকের ভারতের আসল রাজা।
এবার প্রশ্ন হলো এ নিয়ে আপত্তি করছি কেন?।
এই গুজরাটি মাড়োয়ারি লবি বেশিরভাগই সময় ভারতের বিভিন্ন দখলদার শাসকদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নিজেদের শাসনক্ষমতা চালিয়েছে এবং অন্যান্য জাতির পুঁজি এবং পুঁজির উৎসগুলো ধ্বংস করেছে।
বৃটিশদের সাথে ও এদের বন্ধুত্ব ছিল বলেই গুজরাট এবং মাড়োয়ারদের ভূমি হতে তেমন কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী আমরা দেখি নি।
হিন্দিভাষী অঞ্চলেও কিছু বিষয় ছাড়া খুব একটা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন কিন্তু কখনোই হয় নি।
সবথেকে বেশি আন্দোলন হয়েছিল বৃটিশ শাসনের অবিভক্ত বাংলা ও অবিভক্ত পাঞ্জাব ভূমিতেই।
বিষ্ময়কর হলেও সত্যি এই দুই অঞ্চলই 1900 সালের শুরুর দিকেই মুসলিম মেজরিটি হয়ে যায়।
অনেকেরই অভিযোগ যে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে মুসলমানরা কম লড়েছে কেন?।
কথাটা অর্ধসত্য তার কারণ প্রথম বৃটিশ বিরোধী গন আন্দোলনে 1857 সালে যখন সিপাহী বিদ্রোহ হচ্ছে তখন দিল্লির দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ্ জাফরকে মুখ করে মুসলিমরা ভারতকে বৃটিশদের করাল গ্রাস হতে উদ্ধারের জন্য ঝাঁপিয়ে পরলো তখন আবার বৃটিশ চলে গেলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এই ভয়েই বিভিন্ন হিন্দু রাজা ও প্রজারা এই আন্দোলন হতে পিছিয়ে আসে এবং উল্টো বৃটিশদের সহযোগিতা করেছে।
এবার এরপর যখন হিন্দু ও শিখেরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করলো তখন তারা তাদের স্ব ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এবং স্বধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিমিত্তেই যে লড়াই করতে নেমেছে এটা মুসলমানদের বুঝতে আর ভুল হয়নি।
তাই তারা আর বৃটিশদের বিরুদ্ধে সেভাবে লড়ে নি,আর যেহেতু বঙ্গ ও পাঞ্জাবে 1872 সালের জনগনাতেই মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় হিন্দু ও শিখ জনগোষ্ঠীর সমান সমান হয়ে যায় বৃটিশ সরকার এটা বুঝতে পারে যে মুসলিমদের যদি পরোক্ষভাবে স্বপক্ষীয় বানানো যায় তবে যে হিন্দু মুসলমান আলাদা মানসিক প্রেক্ষাপট আছে তাকে ব্যবহার করে তারা আরো রাজত্ব করতে পারবে।
তার উপর অর্ধেক এর বেশি জনগোষ্ঠী যদি নিস্প্রভ থাকে তাহলে সেই আন্দোলন কিন্তু সহজ হয় না।
এদিকে মুসলমানদের কাছে টানতেই বৃটিশ সরকার কিন্তু মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষেই বঙ্গভঙ্গ করে এবং পাঞ্জাবে ও ধীরে ধীরে মুসলিম নবাব পরিবারগুলোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।
বৃটিশদের মুসলিম লিডারদের সাথে একাত্মতা পোষণ মূলত মুসলিম সমাজকে বৃটিশ বিরোধী হতে দেয়নি তদুপরি যারা 1857 সালে মুসলিম শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভয়ে বৃটিশদের সাথে আর যুদ্ধ করেনি তাই মুসলিম সমাজ ও এদের পক্ষে আর জান দিয়ে সেভাবে লড়েনি।
এদিকে যারা কোনদিনই বৃটিশদের বিরুদ্ধে সেভাবে লড়েনি  উল্টো বৃটিশদের পক্ষে সবসময় দালালি করতে তাদেরই হাতে এই ভারতের শাসনক্ষমতা ছেড়ে যায়।
ভারতের তথাকথিত স্বাধীনতার সাথে এটা বোধহয় সবথেকে বড় প্রহসন।
এবার এককালে এরা পুঁজি যোগার করতে নিজেদের বাড়িঘরের নারীদের বৈধ ও অবৈধভাবে ও তৎকালীন শাসকদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভেট চরিয়েছে এবং তাদের হাতে দেশ যে কোন আবেগ নয় তার উত্তম প্রমাণ হলো স্বাধীনতা উত্তর এদের জাতভাই রাই এদেশের সম্পদ ঋণের মারফতে নিয়ে বিদেশে পাচার করে ঋণখেলাপি হয়ে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে এবং এখনো করছে।
তাই এদের হাতে দেশ থাকা আদৌও মঙ্গলকর নয়।
অন্যদিকে বৃটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সবথেকে বেশি লড়েছে বলেই ভারতের শাসনক্ষমতায় বাঙালি ও শিখদের জন্য আবশ্যিক জায়গা থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।
এছাড়াও ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র 18% হয়েও সমগ্র ভারতের জাতীয় করের 33% যারা দেয় সেই ভারতীয় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদেরও একইভাবে কেন্দ্রীয় শাসনক্ষমতার ভাগ থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।
তার উপর এই হিন্দি ভূমির বেশিরভাগই অংশ হতে দেশোন্নয়নে যতো কর ওরা দেয় তার বহুগুণ তারা আজ স্বাধীনতার আটাত্তর বছর পরেও তারা নিচ্ছে।
এটা তাদের একটা অহিন্দি জাতিদের উপর নিরব শোষণ নয় তো আর কি?।
তারা উৎপাদন ও করবে না অথচো দূর্বলতার আর ভাতৃত্বের ভন্ডামি করে ওদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পরোক্ষভাবে নেবে আবার অর্থ ও নেবে দুটো কি একসাথে আদৌও কোন সুস্থ মানুষ মেনে নিতে পারে?।
আচ্ছা সে আমার ভারতীয় ভাই বলে তো না হয় 78 বছর মেনেছি কিন্তু এখনো মানবো?।
তাহলে তারা আর উন্নয়ণ করবে কবে?।
যে হবার সে এই 78 বছরেই হয়ে যেত,এ তো হওয়ার নয় হারামে বেশি পেলে কে না কম নিতে চাই?।
তাই এখন সমগ্র ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে অন্তত এই অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকার রক্ষায় স্বায়ত্তশাসন চাইতে হবেই।

Author: Prosenjit Dey


You may also like