
বাংলা অথবা পূর্ব চীন, এইরকম জায়গায় জমি প্রতি কৃষকের সংখ্যা অনেক বেশি কারণ জমি খুব উর্বর। ফলে এখানে প্রথমে পূর্ণ ভূমি সংস্কার হওয়া দরকার। পূর্ণ ভূমি সংস্কার মানে "হাল যার, জমি তার"। ভূমি সংস্কারের পরে একটা গোটা জেনারেশন তৈরি করা দরকার যার সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষা থাকবে এবং যাতায়াত ও যোগাযোগের জন্য পর্যাপ্ত প্রকাঠামো থাকবে। এটা কিভাবে হবে?
কৃষক নিজের জমির মালিক হয়ে বেশি কাজ করবে কারণ জমির ফলন পুরোই তার হবে। এভাবে বহু কৃষক উৎপাদন বাড়িয়ে পুঁজি তৈরি করবে। এই পুঁজি বহু কৃষকের মধ্যে বন্টিত বলে কোনও কৃষক ব্যক্তিগতভাবে বড়ো বিনিয়োগ করতে পারবেনা। তাই রাষ্ট্রকে এই পুঁজি আয় কর বা ফসলের দামের ওপর কর চাপিয়ে তুলতে হবে এবং সেই পুঁজি দিয়ে রাষ্ট্রকে অলাভজনক কিন্তু উৎপাদনকারী বিনিয়োগ করতে হবে পরিকাঠামোতে, যেমন শিক্ষা স্বাস্থ্য রাস্তা ব্যঙ্ক ইন্টারনেট ভোকেশানাল ট্রেনিং ইত্যাদি।
এইভাবে ২০ থেকে ৩০ বছর পরে একটা জেনারেশন তৈরি হবে যারা স্বাস্থ্যবান শিক্ষিত শ্রমিক শ্রেণী। সেই সময় শিল্পায়ন প্রক্রিয়া যদি চালায় তাহলে কৃষক রেজিস্ট্যান্স অনেক কম আসে। কারণ কৃষকদের পরের জেনারেশন শিক্ষিত বলে তারা শিল্পের শ্রমিক হতে চাইবে কারণ শিল্প শ্রমিক হয়ে তারা লাভবান হবে। এই জিনিসটাই ঘটেছে চীনে।
কিন্তু যদি পূর্ণাঙ্গ ভূমি সংস্কার না হয় (যেমন জমিদারী উচ্ছেদ করে বৃহৎ কৃষকের হাতে জমি তুলে দেওয়া বা ওপারেশন বর্গা যেখানে বর্গাদার ফলনের নির্দিষ্ট শেয়ারে মালিকানা পায় মাত্র জমির মালিকানা পায়না), যদি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পর্যাপ্ত দেওয়া না হয়, তাহলে কৃষকের পরবর্তী জেনারেশন-এর শিল্পের শ্রমিক হিসেবে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আর ভারতের মতো দেশে যেহেতু বাঙালি কৃষককে শিল্পের শ্রমিক হতে গেলে বিহার থেকে আসা ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে সেই জন্য শিল্পের শ্রমিক হওয়া বাঙালি কৃষকের পক্ষে অনেকটাই অলাভজনক হয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে চীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতির কথা বলা দরকার। সেই নীতির নাম হল "হুকাও"। "হুকাও"-এর মানে প্রত্যেকটা প্রদেশের ভূমিপুত্র-রা নিজের প্রদেশে কিছু বিশেষ সামাজিক সুরক্ষা পেয়ে থাকে প্রাদেশিক সরকার দ্বারা যা সেই প্রদেশে অন্য প্রদেশ থেকে আসা মানুষেরা পায়না। ফলে বাইরের প্রদেশ থেকে আসা শ্রমিক-দের প্রদেশের ভূমিপুত্র শ্রমিকদের অপেক্ষা বেশি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। ফলে ভূমিপুত্র শ্রমিকেরা প্রদেশের শ্রম বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে। এই জন্যে চীনের যে কোন প্রদেশের কৃষকেরা কৃষক থেকে শ্রমিক হতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এই বিষয় কিন্তু ভারতের প্রশ্চীম বঙ্গের ক্ষেত্রে হয়না।
এই জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন করতে গিয়ে বামফ্রন্ট সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অপারেশন বর্গা কখনোই পূর্ণাঙ্গ ভূমি সংস্কার নয। ওপারেশন বর্গা কেবল গ্রাম পঃ বঙ্গের কৃষকদের খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের সুরাহা করেছিল। পঃ বঙ্গ সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে পুঁজি তুলে বিনিয়োগ করতে পারেনি। ফলে শিক্ষা স্বাস্থ্য পশ্চিমবাংলার গ্রামে খুব একটা উন্নত নয়। ফলে পশ্চিমবাংলার কৃষক শিল্প শ্রমিক হওয়ার জন্য খুব একটা প্রস্তুত ছিল না।
বাঙালি মধ্যবিত্ত (সিপিএম নেতৃত্ব) চেয়েছিল গুজারাতি মাড়োয়াড়ি পুঁজির দালাল হয়ে পঃ বঙ্গের কৃষকদের উচ্ছেদ করে দালালি খেতে। পঃ বঙ্গের কৃষকেরা শিল্প শ্রমিক হয়ে আদৌ মাড়োয়াড়ি গুজারাতি মালিকানাধীন শিল্পে কাজ পাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা করেনি। আসলে উচিত ছিল বাঙালি মধ্যবিত্ত বাঙালি কৃষকের সাথে হাত মিলিয়ে গুজারাতি মাড়োয়াড়ি পুঁজি ও ব্যবসার দখল নেবে। তারপরে পূর্ণ ভূমি সংস্কার করে ধাপে ধাপে শিল্পায়ণের পথে এগোবে।
গুজারাতি মাড়োয়াড়ি পুঁজি ও ব্যবসার দখলের প্রক্রিয়াটাই হল পঃ বঙ্গের স্বায়াত্বশাসন।
Author: Saikat Bhattacharya