জাতি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতোইঃ যত তথ্য তত কার্যকর

14-June-2025 by east is rising 11

চীন একমাত্র অবিচ্ছিন্ন সভ্যতা কারণ চীন লাগাতার মনে রেখেছে তার তাম্র যুগ থেকে শুরু হওয়া ৫,০০০ বছরের ইতিহাস। অর্থাৎ চীনারা তাদের ৫,০০০ বছরের ইতিহাসকে আপনার বলে মনে করে এবং সেই ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য ও অবিজ্ঞতা লাগাতার ব্যবহার করে। খ্রিষ্ট পূর্ব ১০০ সালের কোনও হান শাসক তার ১,০০০ বছর আগের শাং শাসকের তথ্য ও অবিজ্ঞতা মাথায় রাখত। আবার ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মিং শাসক তার ১,৫০০ বছর আগের হান শাসকের তথ্য ও অবিজ্ঞতা ব্যবহার করত। কেবল শাসকেরাই নয়, সেনা নায়কেরা, গাণিতিকেরা, আমলারা এভাবে ৫,০০০ বছরের জ্ঞান মাথায় রাখে। আজকের চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও তাই ৫,০০০ বছরের তথ্য ও অবিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়।

ইরান মনে রেখেছে প্রায় তার লৌহ যুগ থেকে শুরু হওয়া ৩,০০০ বছরের ইতিহাস। তুর্কিরা মনে রেখেছে প্রায় ২,০০০ বছরের ইতিহাস যা শুরু হয় যাযাবর শিয়ংনু তুর্কি ও চীনের হান সাম্রাজ্যের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আরব উপকূল, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে প্রায় ১,৫০০ বছরের ইতিহাস অবিচ্ছিন্নভাবে মনে রেখেছে। তারা ইসলামের আবির্ভাবের আগের ইতিহাসকে নিজের বলে মনে রাখেনি আর তাই সেই তথ্য ও অবিজ্ঞতাও ব্যবহার না করে করে ভুলে গেছে। হয়তো বিপুল পরিমাণে আরব পুরুষের আগমন জনবিন্যাস বদলে দিয়েছিল। তাই আরবেরা আসার আগের মানুষের ইতিহাস আরবদের আগমণের পরের সমাজ আর মনে রাখেনি। ইসলামের আবির্ভাবের সাথে সাথে আরবেরা শুধু ধর্মে ও যুদ্ধেই জয়ী হয়নি, ভাষাতেও বিজয়ী হয় এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে। এভাবেই পুরনো সেমিটিক ভাষা, গ্রীক ভাষা ও লাতিন ভাষার জায়গায় চলে আসে আরবি ভাষা। জাপানীরা মনে রাখে তাদের লৌহ যুগ থেকে শুরু হওয়া ১,৫০০ বছরের ইতিহাস। লঙ্কাবাসী মনে রেখেছে বাংলার বিজয় সিংহ-এর লঙ্কা জয়ের সময় থেকে প্রায় ২,৬৫০ বছরের ইতিহাস।

ইউরোপের গ্রীকেরা মনে রেখেছে ৩,০০০ বছরের ইতিহাস মূলত লৌহ যুগের সূচনা থেকে। বর্তমান পশ্চীমা জাতিগুলো যেমন এংলো-স্যাক্সন, জার্মান, স্পেনীয়, ডাচ, ইত্যাদি মনে রেখেছে তাদের কৃষি শেখা থেকে শুরু করে প্রায় ১,৫০০ বছরের ইতিহাস। স্কাণ্ডেনাভীয়রা ও স্লাভেরাও (যার মধ্যে পড়ে রুশরা) মাথায় রেখেছে ১,৫০০ বছরের ইতিহাস।

দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দি-গুজারাত অঞ্চল সরাসরি ইতিহাস মনে রাখেনি। কিন্তু ইতিহাসের সারাংশ মনে রেখেছে রামায়ণ, মহাভারত-এর মতো দুটো মহাকাব্য লিখে। রামায়ণ বলে হিন্দি অঞ্চলের অ-হিন্দি অঞ্চল জয় করার কথা আর মহাভারত বলে হিন্দি অঞ্চলের গৃহযুদ্ধ-এর কথা। এছাড়াও ধর্মীয় শিক্ষা তো আছেই। দ্রাবিড় অঞ্চল সঙ্গম সাহিত্য-এর মধ্য দিয়ে কিছুটা একই প্রয়াস চালিয়েছে। বাংলা কিন্তু একেবারেই ইতিহাস বিস্মৃত। বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহ-এর লঙ্কা জয়ের ইতিহাস লঙ্কাবাসী মনে রাখলেও বাঙালি মনে রাখেনি। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫০-এর বিজয় সিংহ ও তার অবিজ্ঞতা সম্পর্কে ৫৯০ শতকের শশঙ্ক ছিল অজ্ঞ। তেমনই ৬৫০-১০৫০ সালের পাল রাজারা ছিল শশঙ্ক সম্পর্কে অজ্ঞ। আবার ১৩৫০-১৫৭৫ সালের বাংলার সুলতানেরা ছিলেন পাল রাজাদের সম্পর্কে অজ্ঞ। একই ভাবে মুরশিদকুলি খান থেকে সিরাজ-উদ-দোউল্লাহ ছিলেন বাংলার সুলতান-দের সম্পর্কে অজ্ঞ। ব্রিটিশ পরবর্তী বাংলা তাই ব্রিটিশ পূর্ববর্তী বাংলাকে ভাবে অন্ধকারের যুগ। ব্রিটিশ পরবর্তী বাংলার ইতিহাস বড়ো জোড় ৩০০ বছরের। বাঙালি এই ৩০০ বছরের তথ্য ও অবিজ্ঞতার বাইরে বেরতে পারেনা, ভাবতে পারেনা। তাই সে থেকে যায় দাস। তার ভাবনার পরিধি অত্যন্ত ক্ষুদ্র। কারণ তার নিজের সম্পর্কে তথ্য কম। তথ্য কম বলেই তার বুদ্ধি কম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যেমন যত বেশি তথ্য (Data) দেওয়া যায় ততই ভাল সে কাজ করে। জাতিও সেরকম। নিজের সম্পর্কে যে জাতি তথ্য যত বেশি আহরণ করে, সেই জাতি তত বেশি কার্যকর হয় ও শক্তিশালী হয়।

বাঙালির ইতিহাস বোধ দুর্বল আর তাই ভবিষ্যৎ চিন্তাও কম। যে জাতির ইতিহাস যত ছোট সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তত কম সচেতন।

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like