Unipolar vs Multi-polar

নাগরিকত্ব ! মানিক -সুকৃতি চুলোচুলি। কে ঠিক , সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস নাকি মানিক ফকির!

21-July-2025 by east is rising 32

এক সময়ের বাংলাদেশি সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস কি প্রথম থেকেই উদ্বাস্তু বিরোধী! রাষ্ট্রের দালাল হিসাবে কাজ করে চলেছেন সফল ভাবে? নাকি তিনিই ঠিক, মানিক ফকির বাস্তবেই চটিচাটা তৃণমূলের দালাল ! এ প্রশ্ন অনেকের।

তাই কলম ধরলাম।

সম্প্রতি তিন তিনটি আলোচনা সভায় মুখোমুখি বক্তা হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। অর্থাৎ আমি মানিক ফকির আর উদ্বাস্তু দলিত নেতা সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস।

শেষ মিটিংটা হল বারাসাতে ঐকতান নামে একটি প্রসিদ্ধ সংগঠনের ডাকে, মূলত ওয়াকফ ও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আলোচনা। বক্তব্যের মাঝেই

সুকৃতি বাবু আমাকে বললেন, এখন যা অবস্থা দেখা যাচ্ছে ২০০৩ সালকেই মনে হচ্ছে, নাগরিকত্বের “ কাট অফ ডেট “ ধরবে সরকার। মানিকদা আপনাকে একটু ভাবতে বলছি। “

আমি বক্তব্য রাখতে উঠে প্রথমেই বললাম, নাগরিকত্ব আইন বিষয়ে আমি বড্ড নতুন। সুকৃতিদা আন্দোলন করছেন সে - ই ২০০৩ থেকে। তাছাড়া আমি স্বাধীনতাকে খুব আয়েশ করে ভোগ করা পরিবারের মানুষ।

তাই ছিন্নমূল দেশান্তরিত উদ্বাস্তু মানুষের যন্ত্রণা আমি ঠিক কতটা উপলব্ধি করতে পেরেছি তা প্রশ্নের বাইরে নয়। তবে সুকৃতিদা আজীবন তাদের রক্ষার কাজই করে চলেছেন। তিনি আমার গুরুদেবসম। তবে নাগরিকত্বের আইনটা এমন একটা বিষয় যা আজও সব মানুষ সঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারলো না। তাই আন্দোলন ও হলো না। হয়তো এটাই লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায় কালো অক্ষরে।

আইনি ব্যাখ্যায় সুকৃতি বাবু আর আমি দুজন দুই মেরুর। অথচ আইনটা একই। সুকৃতি বাবু যা যা বলেন, বিজেপি নেতা অসীম সরকার একই কথা বলেন। তবে একজন প্রচলিত অর্থে পন্ডিত অন্যজন মূর্খ। কবিয়াল অসীম সরকার বলেন, বিজেপি বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের আগে আসা উদ্বাস্তুদের বৈধ করে দিয়েছে। সুকৃতি বাবু বলেন, এতদিন উদ্বাস্তুরা ছিলেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আর আজ অনুপ্রবেশকারী তকমা মোচন হয়েছে। হয়েছে সিএএ ২০১৯ দ্বারা। ওরা বৈধ।

কবিয়াল অসীম বলেন, চটিচাটা মানিক ফকির কোটি কোটি টাকা পাচ্ছে, তাই সিএএ বিরোধিতা করছে।

সুকৃতি বাবু বলছেন, আজকের সিএএ আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। যারা বিরোধিতা করছে, তারা উদ্বাস্তুদের ক্ষতি করে ফেলছে। বিজেপি বিধায়ক অসীম বলেন, - সিএএ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবার আইন। আর সুকৃতি বাবু বলেন,- সিএএ তে কিছু উদ্বাস্তু নাগরিকত্ব পাবে। সবাই পাবেন না।

আর আমি মানিক ফকির বা দামাল বাংলার নেতারা যেমন রাজু ঘোষ, দীপক ব্যাপারী, শিখা মন্ডলরা বলেন,

সিএএ হচ্ছে বৈধ শরণার্থী আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করার আইন। দামাল বাংলা সংগঠন বলে, সিএএ তে তারাই আবেদনের যোগ্য যারা পাসপোর্ট ও ফরেন অ্যাক্টে ছাড় পেয়েছেন। মাত্র কয়েক হাজার মানুষ বাদে কোটি কোটি উদ্বাস্তু ছাড় পাবার আবেদন করেন নি। তাই তারা কেও ছাড় পাননি,তাই তারা শরণার্থী নন। আইনের চোখে তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। ভারত সরকার তাদেরই দেশ থেকে তাড়াতে পুশব্যাক করছে। এটাই দামাল এর বক্তব্য। তাই তাদের স্লোগান হচ্ছে, আজ পর্যন্ত যারা ভারতে বসবাস করছে তাদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চাই।

যাইহোক, বারাসতের সভায় বক্তব্য রাখার সময় দর্শকদের উদ্দেশে আমি বললাম, আমার আর সুক্রিতিদার বক্তব্যে বহু ফারাক থাকার কারণে সমাজের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তাই, আপনারা দয়া করে আমাদের দুজনকে বসে আলোচনা সুযোগ করে দিন। সঠিকটা উঠে আসুক । তারপর সেই সঠিক ব্যাখ্যা নিয়ে আন্দোলন হোক। তা না হলে ভয়াবহ দিন এগিয়ে আসছে। অবশ্য আমার কথার কোন উত্তর সেদিন দেননি মাননীয় সুক্রিতি রঞ্জন বিশ্বাস।

যেহেতু নাগরিকত্ব বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তিনি, তাই স্বাভাবিকভাবে তার কথা বেশিরভাগ মানুষ মানেন। -সংগঠক রাও।

তার কাছে আমি নিতান্তই বালখিল্য।

যাই হোক, সব জায়গায় সুক্রিতিদার নিজস্ব কিছু লোক আছে। তারা বিভিন্ন মিটিং এ গিয়ে বসেন, তারপর সুক্রিতিদা নিজের বক্তব্যটা তুলে ধরে চলে যান এবং আলোচনাগুলো ওখানেই শেষ হয়ে যায় আর এগোয় না। লোকেরা কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।

গতকাল ঠাকুরনগরে সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের ডাকা মিটিংয়ে এমনই একটি ঘটনা ঘটলো। দিনের শেষে সেই কনভেনশনের রেজাল্ট হল শূন্য। এমনই অভিযোগ পেলাম কয়েকজনের কাছ থেকে। যদিও দামাল বাংলার অন্যতম নেতা রাজু ঘোষ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সুকৌশলে তাকে বলতে দেওয়া হয়নি। এক কথায় সুক্রিতিপন্থীরা হাইজ্যাক করেছিল আলোচনাটাকে। শেষ পর্যন্ত এই কনভেনশনের রেজাল্ট কিছু হলো না। আমি মাননীয়া মমতাবালা ঠাকুরকে বুঝেছিলাম, নাগরিকত্ব নিয়ে আর বোঝাবুঝির দরকার নেই।

যারা সত্যিটা বুঝেছে তাদের নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেন। মমতা দেবীর সেক্রেটারি বললেন, সুকৃতি বাবুকে কে ডেকেছে জানি না। -তবে মিটিং ফ্লপ।

মঞ্চে মাইক হাতে ছিলেন ডাক্তার সুকেস চৌধুরী। কয়েক বছর আগে তিনি বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের চেয়ারম্যান ছিলেন । এখন সে সুকৃতিদার ডান হাত। নাগরিকত্ব বিষয়ে বহু আলোচনা হয়েছে ওর সঙ্গে আমার। তবু ও বলে আমি নাকি দোষী।

নাগরিকত্ব বিষয়ে প্রায় সব মিটিংয়েই উপস্থিত থাকতে দেখা যায় সুকৃতি বাবুদের। তিনি নাকি সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট পাওয়া ভারতের বৈধ নাগরিক। তবে মূল আইন থেকে জনগণকে অনেক দূরে সরিয়ে দেওয়াটাই উনার অন্যতম কাজ বলে আমার মনে হয়েছে। তিনি এটা করেন তার মনমোহিনী ইমেজের মাধ্যমে। ব্যক্তি জীবনে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেন।

এবার আসি নাগরিকত্ব বিষয়ে সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস ও দামাল নেতা মানিক ফকিরের ব্যাখ্যার ফারাকের বিষয়ে।

(১) সুকৃতি রঞ্জন:

১৯৫০ থেকে ৮৭ এর ১ জুলাইয়ের মধ্যে যে শিশুই ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে তিনি নাগরিক। শিশুর বাবা-মা অনুপ্রবেশকারী হলেও। তিনি বলেন, উদ্বাস্তুদের জীবনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে সি এ এ ২০০৩। এই সংশোধনী উদ্বাস্তু সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, এনআরসি উদ্বাস্তুদের শেষ করে দেবে।

ফলে ১৯৫০ থেকে ৮৭ এর মধ্যে জন্মগ্রহণ করা উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্বের আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়েছে। বেশির ভাগ জন বিজেপি হয়ে গেছে। তারা অনেকেই মনে করেন এনআরসি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। ভোট এলে এনআরসি ঘুম থেকে ওঠে।

মানিক ফকির:

সংবিধানের দ্বিতীয় পার্টের ৫ ( খ ) অনুসারে উদ্বাস্তু সন্তানরা কোনো দিনই ভারতের নাগরিক নন। যখনই জন্মাক।

(১) তাছাড়া ১৯৫০ সালের আসাম ইমিগ্রেশন এক্সপালশন অ্যাক্ট, ( সারা ভারতে প্রযোজ্য )

(২) ১৯৫১ সালের জেনেভা উদ্বাস্তু সম্মেলন,

(৩) ১৯৫২ লাগু হওয়া ব্রিটিশ আইন ১৯২০ সালের পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৬ সালের বৈদেশিক অ্যাক্ট ও মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট, লাগু হবার ফলে আইনত, ভারতে কোনো উদ্বাস্তু ঢুকতে পারেনি।

এমনকি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন, ১৯৮৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এ গুলো সবই সংবিধান অনুসারেই হয়েছে।

সংবিধানের ৫ ( খ ) তে বলা আছে, সংবিধান প্রকাশের আগে যে সন্তানের পিতা-মাতার মধ্যে যেকোনো একজন ভারতের নাগরিক, সেই সন্তান ভারতের জন্মগত নাগরিক। আর অপরজন! আইন অনুযায়ী ভারতবর্ষে উদ্বাস্তুদের ঢোকার সুযোগ ছিল না।

এছাড়াও এনআরসি ভারতের সংবিধান স্বীকৃত। কারণ, সংবিধান বলে দিয়েছে কারা ভারতের নাগরিক। আরএনআরসি হচ্ছে সেই নাগরিকদের তালিকা।

ফলত, মূল ভয় এনআরসি ছিল না। মূল ভয় ছিল দেশের পাসপোর্ট অ্যাক্ট ও বৈদেশিক আইন। ১৯৭০,৮০,৯০ ইত্যাদি সালেও বৈদেশিক আইনে বহু মানুষ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে বে নাগরিক হয়েছে ভারতে।

আমাদের আন্দোলন করতে হতো ওই দুটো আইনের বিরুদ্ধে। যদিও ওই আইন দুটো উঠে গিয়ে আরো ভয়ংকর আইন এসেছে দেশে।

আমাদের আন্দোলন করতে হতো সংবিধান সংশোধন করার জন্য। যে কারণে দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি দুর্গাপুরে এসে বলে গেলেন, সংবিধান অনুযায়ীই উদ্বাস্তুরা বে নাগরিক, তাদের ভারত ছাড়া করবোই। তাই বাংলা ও বাঙালিদের বাঁচাতে এখনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আমাদের।

মানিক ফকির

২০/৭/২০২৫

দামাল বাংলা

9836327536

Author: Saikat Bhattacharya


You may also like