
বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ চীন অস্ত্র রপ্তানিতে বিশ্বের টপ ফাইভ কান্ট্রি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ফ্রান্সের পরেই চীনের অবস্থান। তবে সম্প্রতি ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারনে রাশিয়াকে মারাত্মকভাবে সাফার করতে হচ্ছে। এমতবস্থায় রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি অনেকাংশেই বন্ধ, আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সেই জায়গা অনেকটাই দখল করে ফেলেছে চীন।
চীন বর্তমানে পৃথিবীর চল্লিশটিরও অধিক দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে থাকে। চীন থেকে অস্ত্র ক্রয় করা দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশ রয়েছে টপ টু'তে। প্রথম স্থানে পাকিস্তান, এরপর বাংলাদেশ, তৃতীয় অবস্থানে মায়ানমার এবং চতুর্থ আলজেরিয়া।
অস্ত্র বাণিজ্য প্রসারিত করতে চীন ২০২০ সালে সর্বপ্রথম ইউরোপের দেশ সার্বিয়ায় প্রবেশ করে। সেই বছর প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে সার্বিয়ার কাছে সফিস্টিকেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রি করতে সমর্থ হয় চীন। এরপর ২০২১ সালে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিকে জেএফ স্যাভেন্টিন থান্ডার কিনতে লবিং করে চীন; যদিও মার্কিন চাপের মুখে চীনের মার্কেটিং পলিসি ধোপে টিকেনি। এছাড়া রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালে সৌদি আরবে একটি ডিফেন্স এক্সিবিশনে চীনের প্রায় ৪০ টি ডিফেন্স কম্পানী “Chaina Defence” নামে একটি ব্যানারে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দেয়। একই বছর দুবাই এয়ার শোতে চীন প্রথমবারের মত তাদের জে টেন এবং ওয়াই টুয়েন্টি হেভি লিফট ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট ফ্লাই করে।
প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী চীনের এই অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন, একদিকে চাইনিজ অস্ত্র মার্কিন অস্ত্রের চেয়ে দামের দিক থেকে অনেক রিজনেবল, এছাড়া চাইনিজ অস্ত্রের রিপেয়ার, মেইন্টানেন্স খরচ কম, সহজলভ্য স্পেয়ার পার্টস এবং মার্কিন অস্ত্রের তুলনায় দ্রুত ডেলিভারি পাওয়া যায়― যে বিষয়গুলি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। আর তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কোনো মূল্যে চীনের এই অগ্রযাত্রা রোধ করা হবে।
দুটি উপায়ে চীনের অস্ত্র রপ্তানি লিমিট করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমটি, চাইনিজ ডিফেন্স কোম্পানি গুলিকে স্যাংকশন দেওয়ার মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়টি ক্রেতা দেশ গুলিকে জোরপূর্বক বা ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে চীন থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে
চাইনিজ ডিফেন্স কোম্পানিকে স্যংকশন দিয়ে অস্ত্র রপ্তানি লিমিট করার কনসেপ্ট প্রথম শুরু করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে চাইনিজ মিলিটারি এক্সপোর্ট লিমিট করতে এক্সিকিউটিভ অর্ডার- I3959 জারি করেন, যা পরবর্তীতে জো বাইডেন এডমিনস্ট্রেশনও অনুসরণ করার মাধ্যমে আরো কড়াভাবে চাইনিজ ডিফেন্স কম্পানিগুলিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এক্সিকিউটিভ অর্ডার-I4032 সাইন করে। এছাড়া বাইডেন চীনের বেশ কয়েকটি নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটির উপরও স্যাংকশন দেয়। অর্থাৎ চীনের অস্ত্র বাণিজ্য রুখতে যারপরনাই করছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু গতকাল পাকিস্তান ভূখণ্ডে ভারতের অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার পরপরই যখন খবর আসতে শুরু করে- চীনা যুদ্ধবিমান এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফ্রেঞ্চ নির্মিত মিরেজ, রুশ মিগ-২৯, সু-৩০ শুটডাউন হয়েছে; মুহূর্তেই চীনের স্টক মার্কেটে চেংদু এভিয়েশনের শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে শতভাগ নিশ্চিত না হলেও রাফালে শুটডাউনের খবরে ডাসল্ট এভিয়েশনের শেয়ারের মূল্য অলৌকিকভাবে কমতে থাকে।
পোস্টে সংযোজিত ছবিটা খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, এক রাতে চীনের চেংদু এভিয়েশনের শেয়ারের মূল্য প্রায় পনেরো শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পৃথিবী জুড়েই এখন জে টেন যুদ্ধবিমান এবং এইচকিউ নাইন এয়ার ডিফেন্সের সুনাম।
খুব দ্রুতই দেখতে পাবেন, বেশ কয়েকটি দেশ জে টেন অর্ডার করবে। চীনের যে অস্ত্র বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র রুখতে চাইছিল তা মাঠেমারা। উল্টো পাকিস্তানের মাধ্যমে আরো চাঙ্গা হয়ে উঠবে চীনের অস্ত্র বাণিজ্য।
Author: Saikat Bhattacharya