
আমেরিকার বাইবেল বেল্ট (Bible Belt) অঞ্চল, যা প্রধানত দক্ষিণ ও মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের রক্ষণশীল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য পরিচিত, সেখানে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রথা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণের ওপর নির্ভর করে। এই অঞ্চলে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক কাঠামোর প্রভাব বেশি, যা এই প্রথাকে প্রভাবিত করে।
১) ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য ________________
বাইবেল বেল্টে অনেক পরিবার কট্টর খ্রিস্টান বিশ্বাস পালন করে, বিশেষ করে ইভানজেলিকাল বা ফান্ডামেন্টালিস্ট সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়গুলোতে বিয়েকে পবিত্র এবং পারিবারিক জীবনের মূল ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। বাইবেলের কিছু ব্যাখ্যা অনুসারে, নারীদের জন্য প্রাথমিক ভূমিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয় মা ও স্ত্রী হওয়া। এই বিশ্বাসের কারণে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
২) সামাজিক ও পারিবারিক চাপ_________________
এই অঞ্চলের সমাজে প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়। মেয়েদের প্রায়ই শৈশব থেকেই বিয়ে ও মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরিবার ও সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা থাকে যে মেয়েরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করে সংসার শুরু করবে।
কিছু ক্ষেত্রে, অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় যাতে মেয়েরা উচ্চশিক্ষা বা ক্যারিয়ারের দিকে বেশি মনোযোগ না দেয়, যা কিছু রক্ষণশীল সম্প্রদায়ে "ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে" বলে বিবেচিত হতে পারে।
৩) অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ________________
বাইবেল বেল্টের অনেক শহর ও গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকে। পরিবারগুলো মনে করতে পারে যে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া তাদের অর্থনৈতিক বোঝা কমায়, বিশেষ করে যদি পরিবারের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়।
এই অঞ্চলের সংস্কৃতিতে বিয়ে একটি সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। অল্প বয়সে বিয়ে করা মেয়েরা সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্মানিত হয় এবং পরিবারের জন্যও এটি গর্বের বিষয় হতে পারে।
৪) শিক্ষার অভাব বা ভিন্ন অগ্রাধিকার_______________
বাইবেল বেল্টের কিছু এলাকায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বা স্বাধীন ক্যারিয়ার গড়ার চেয়ে পারিবারিক জীবনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে, অনেক মেয়ে কিশোর বয়সে বা বিশের শুরুতে বিয়ে করে ফেলে, কারণ তাদের জন্য অন্য কোনো পথকে ততটা উৎসাহিত করা হয় না।
৫) আইনি ও সামাজিক কাঠামো_______________
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে, বিশেষ করে বাইবেল বেল্টে, অল্প বয়সে বিয়ের জন্য আইনি বয়সসীমা তুলনামূলক নমনীয়। পিতামাতার সম্মতি থাকলে ১৬ বা ১৭ বছর বয়সেও বিয়ে সম্ভব। এই আইনি সুযোগ অল্প বয়সে বিয়েকে সহজ করে।
বাইবেল বেল্টের প্রধান অঞ্চল ---- বাইবেল বেল্টে সাধারণত নিম্নলিখিত রাজ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত, যেখানে অল্প বয়সে বিয়ের প্রচলন কিছু সম্প্রদায়ে দেখা যায়_______
১) টেক্সাস : এখানে পিতামাতার সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে সম্ভব। ২) আলাবামা: এখানকার আইন ১৬ বছর বয়সে পিতামাতার সম্মতিতে বিয়ের অনুমতি দেয়। ৩) মিসিসিপি : মেয়েদের ১৬-১৮ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার প্রচলন আছে। আইনি বয়সসীমা এখানেও নমনীয়। ৪) আর্কানসাস: এখানে পিতামাতার সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে সম্ভব। ৫) টেনেসি। : টেনেসির আইন ১৭ বছর বয়সে পিতামাতার সম্মতিতে বিয়ের অনুমতি দেয়। ৬) ওকলাহোমা : এখানে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে সম্ভব। ৭) কেনটাকি : আইনি বয়সসীমা এখানেও ১৬ বছর। ৮) জর্জিয়া : এখানে ১৬ বছর বয়সে পিতামাতার সম্মতিতে বিয়ে সম্ভব। ৯) লুইজিয়ানা : এখানে আইনি বয়সসীমা ১৬ বছর। ১০) মিসৌরি এবং কানসাস : আইনি বয়সসীমা ১৬ বছর।
ধর্মীয় সম্প্রদায়______________
সাউদার্ন ব্যাপটিস্ট: এই সম্প্রদায় বাইবেল বেল্টে প্রভাবশালী। এরা ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধের ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে অল্প বয়সে বিয়ে অন্তর্ভুক্ত।
তথ্য ও পরিসংখ্যান___________
ইউএসএনএইচআই (Unchained At Last) এর মতে, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০০,০০০ নাবালকের (বেশিরভাগ মেয়ে) বিয়ে হয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাইবেল বেল্টের রাজ্যগুলো।
আলাবামা, মিসিসিপি, এবং আর্কানসাসে ১৮ বছরের নীচে বিয়ের হার জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি।
Author: Sakib Hasan Piyada