জাতি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতোইঃ যত তথ্য তত কার্যকর

চীন একমাত্র অবিচ্ছিন্ন সভ্যতা কারণ চীন লাগাতার মনে রেখেছে তার তাম্র যুগ থেকে শুরু হওয়া ৫,০০০ বছরের ইতিহাস। অর্থাৎ চীনারা তাদের ৫,০০০ বছরের ইতিহাসকে আপনার বলে মনে করে এবং সেই ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য ও অবিজ্ঞতা লাগাতার ব্যবহার করে। খ্রিষ্ট পূর্ব ১০০ সালের কোনও হান শাসক তার ১,০০০ বছর আগের শাং শাসকের তথ্য ও অবিজ্ঞতা মাথায় রাখত। আবার ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মিং শাসক তার ১,৫০০ বছর আগের হান শাসকের তথ্য ও অবিজ্ঞতা ব্যবহার করত। কেবল শাসকেরাই নয়, সেনা নায়কেরা, গাণিতিকেরা, আমলারা এভাবে ৫,০০০ বছরের জ্ঞান মাথায় রাখে। আজকের চীনা কমিউনিস্ট পার্টিও তাই ৫,০০০ বছরের তথ্য ও অবিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়।

ইরান মনে রেখেছে প্রায় তার লৌহ যুগ থেকে শুরু হওয়া ৩,০০০ বছরের ইতিহাস। তুর্কিরা মনে রেখেছে প্রায় ২,০০০ বছরের ইতিহাস যা শুরু হয় যাযাবর শিয়ংনু তুর্কি ও চীনের হান সাম্রাজ্যের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আরব উপকূল, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে প্রায় ১,৫০০ বছরের ইতিহাস অবিচ্ছিন্নভাবে মনে রেখেছে। তারা ইসলামের আবির্ভাবের আগের ইতিহাসকে নিজের বলে মনে রাখেনি আর তাই সেই তথ্য ও অবিজ্ঞতাও ব্যবহার না করে করে ভুলে গেছে। হয়তো বিপুল পরিমাণে আরব পুরুষের আগমন জনবিন্যাস বদলে দিয়েছিল। তাই আরবেরা আসার আগের মানুষের ইতিহাস আরবদের আগমণের পরের সমাজ আর মনে রাখেনি। ইসলামের আবির্ভাবের সাথে সাথে আরবেরা শুধু ধর্মে ও যুদ্ধেই জয়ী হয়নি, ভাষাতেও বিজয়ী হয় এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে। এভাবেই পুরনো সেমিটিক ভাষা, গ্রীক ভাষা ও লাতিন ভাষার জায়গায় চলে আসে আরবি ভাষা। জাপানীরা মনে রাখে তাদের লৌহ যুগ থেকে শুরু হওয়া ১,৫০০ বছরের ইতিহাস। লঙ্কাবাসী মনে রেখেছে বাংলার বিজয় সিংহ-এর লঙ্কা জয়ের সময় থেকে প্রায় ২,৬৫০ বছরের ইতিহাস।

ইউরোপের গ্রীকেরা মনে রেখেছে ৩,০০০ বছরের ইতিহাস মূলত লৌহ যুগের সূচনা থেকে। বর্তমান পশ্চীমা জাতিগুলো যেমন এংলো-স্যাক্সন, জার্মান, স্পেনীয়, ডাচ, ইত্যাদি মনে রেখেছে তাদের কৃষি শেখা থেকে শুরু করে প্রায় ১,৫০০ বছরের ইতিহাস। স্কাণ্ডেনাভীয়রা ও স্লাভেরাও (যার মধ্যে পড়ে রুশরা) মাথায় রেখেছে ১,৫০০ বছরের ইতিহাস।

দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দি-গুজারাত অঞ্চল সরাসরি ইতিহাস মনে রাখেনি। কিন্তু ইতিহাসের সারাংশ মনে রেখেছে রামায়ণ, মহাভারত-এর মতো দুটো মহাকাব্য লিখে। রামায়ণ বলে হিন্দি অঞ্চলের অ-হিন্দি অঞ্চল জয় করার কথা আর মহাভারত বলে হিন্দি অঞ্চলের গৃহযুদ্ধ-এর কথা। এছাড়াও ধর্মীয় শিক্ষা তো আছেই। দ্রাবিড় অঞ্চল সঙ্গম সাহিত্য-এর মধ্য দিয়ে কিছুটা একই প্রয়াস চালিয়েছে। বাংলা কিন্তু একেবারেই ইতিহাস বিস্মৃত। বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহ-এর লঙ্কা জয়ের ইতিহাস লঙ্কাবাসী মনে রাখলেও বাঙালি মনে রাখেনি। খ্রিষ্টপূর্ব ৬৫০-এর বিজয় সিংহ ও তার অবিজ্ঞতা সম্পর্কে ৫৯০ শতকের শশঙ্ক ছিল অজ্ঞ। তেমনই ৬৫০-১০৫০ সালের পাল রাজারা ছিল শশঙ্ক সম্পর্কে অজ্ঞ। আবার ১৩৫০-১৫৭৫ সালের বাংলার সুলতানেরা ছিলেন পাল রাজাদের সম্পর্কে অজ্ঞ। একই ভাবে মুরশিদকুলি খান থেকে সিরাজ-উদ-দোউল্লাহ ছিলেন বাংলার সুলতান-দের সম্পর্কে অজ্ঞ। ব্রিটিশ পরবর্তী বাংলা তাই ব্রিটিশ পূর্ববর্তী বাংলাকে ভাবে অন্ধকারের যুগ। ব্রিটিশ পরবর্তী বাংলার ইতিহাস বড়ো জোড় ৩০০ বছরের। বাঙালি এই ৩০০ বছরের তথ্য ও অবিজ্ঞতার বাইরে বেরতে পারেনা, ভাবতে পারেনা। তাই সে থেকে যায় দাস। তার ভাবনার পরিধি অত্যন্ত ক্ষুদ্র। কারণ তার নিজের সম্পর্কে তথ্য কম। তথ্য কম বলেই তার বুদ্ধি কম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যেমন যত বেশি তথ্য (Data) দেওয়া যায় ততই ভাল সে কাজ করে। জাতিও সেরকম। নিজের সম্পর্কে যে জাতি তথ্য যত বেশি আহরণ করে, সেই জাতি তত বেশি কার্যকর হয় ও শক্তিশালী হয়।

বাঙালির ইতিহাস বোধ দুর্বল আর তাই ভবিষ্যৎ চিন্তাও কম। যে জাতির ইতিহাস যত ছোট সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তত কম সচেতন।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

Theoretical General 14-June-2025 by east is rising

ইসরাইল-এর ১৩ই জুন, ২০২৫-এর আক্রমণ ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের কোনো ক্ষতি করতে ব্যর্থঃ ইসরাইলের হাতে সময় খুব কম

বাঙালি একটা কৃষক জাতি। এরা যোদ্ধা না, আর তাই যুদ্ধ আর খেলার পার্থক্য বোঝেনা। এরা ভাবে যুদ্ধে হল গোল খাওয়া আর গোল দেওয়ার বিষয়।

ইসরাইল ৬টা পরমাণু বিজ্ঞানী আর দুজন মিলিটারি প্রধানকে হত্যা করেছে। শোনা যাচ্ছে ইউক্রেইন যেমন রাশিয়ায় ট্রাক বোঝাই ড্রোন বিমান বহরের কাছে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে আঘাত হেনেছে রুশ বিমান বহরে, সেরকম ভাবেই ইসরাইল গাড়ি বোঝাই ড্রোন ইরানের ভেতরে নিয়ে এনে সমর প্রধান ও বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে। বোঝাই যাচ্ছে ইউক্রেইন ও ইসরাইল একই মাথা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মাথাটা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাও বোঝা যাচ্ছে।

একটা ইসরাইলী কমাণ্ডো বাহিনী ইরানের ভেতরে ঘাটি গেঁড়ে অনেকদিন ছিল এবং তারাই রাডার ধ্বংস করেছে বলে শোনা গেছে। কিন্তু ইসরাইল-এর লক্ষ্য কি ছিল? ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করা যাতে ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে না পারে। আন্তর্জাতিক পরমাণু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ২০২৩ সালে জানায় যে ইরান ফুরডো পরমাণু কেন্দ্রে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার মতো যথেষ্ট সরঞ্জাম প্রস্তুত করে ফেলেছে। ইসরাইল হামলা করেছে যাতে ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে না পারে। কিন্তু ইসরাইল একটাও পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কোম পাহাড়ের পাথরের নীচে অবস্থিত ফুরডো-তেই আছে আসল পরমাণু কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে ২০০৭ সালে সাক্সনেট নামের কম্পিউটার ভাইরাস দিয়ে আক্রমণ করেছিল ইসরাইল। প্রচুর পশ্চীমা গণমাধ্যমের ফুটেজ খায় সাক্সনেট। এছাড়াও ইরানের অজস্র পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা করেছে ইসরাইল কিন্তু ইরান আস্তে আস্তে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার মতো সরঞ্জাম তৈরি করে ফেলে ২০২৩ সালে।

ইদানিং ইরান ইসরাইলী পরমাণু কেন্দ্রের হদিসও পেয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা যে ইসরাইল-এর হয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করেছে তাও ইরান ফাঁস করে দিয়েছে।

ইসরাইল জানে ইরান হয় পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে নয় তো বানানো কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিছু বুড়ো সমর প্রধান আর বিজ্ঞানী মেরে খুব লাভ হয়না। ইসরাইল বা ইউক্রেইন-এর আক্রমণ অনেক ফুটেজ পায়। কিন্তু কাজের কাজ হয়না। ইউক্রেইন রুশ বিমান বহরে আঘাত হানার পরে রুশ আক্রমণের সামনে কতটা অসহায় হয়ে গেছে তা পশ্চীমা মিডিয়ার ফুটেজ পায়না। যাই হোক ইরান মনে হয় শীঘ্রই ভারতের থেকে চাবাহার বন্দরের দায়িত্ব কেড়ে নেবে কারণ ও খান দিয়েই হয়তো সবচেয়ে বেশি ইস্রাইলী গুপ্তচর ইরানে ঢুকেছে। ইরান আর রাশিয়া আরও বেশি চীন নির্ভর হয়ে পড়োবে।

ইরান ও রাশিয়া চীরকালই ভারত-কে দিয়ে চীন-কে ব্যলেন্স করার কথা ভাবত। কিন্তু ইউক্রেইন ও ইস্রাইলের সাথে যুদ্ধ রাশিয়া ও ইরানকে যথাক্রমে ভারতের থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আগামী দিনগুলোতে পাকিস্তান-এর মতোই ইরান, মধ্য এশিয়ার স্তান দেশসমূহ, আফঘানিস্তান, রাশিয়া, বেলারুশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। ইউক্রেইন পড়লে হাঙ্গেরী ও রোমানিয়াও প্রস্তুতই আছে।

আজকের আক্রমণের ফলে ইরান ছুতো পেয়ে গেল পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার। উত্তর কোরিয়া ইরানকে যুদ্ধের সরঞ্জাম দেবে জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়া অবশ্যই চীন ও রাশিয়ার সম্মতি নিয়ে জানিয়েছে। উত্তর কোরিয়া দ্রুত পরমাণু অস্ত্র বানানোর সরঞ্জামের কথাই বলেছে। ইরান খুব শীঘ্রই নিজেকে পরমাণু শক্তিধর বলে দাবি করবে। ইস্রাইলকে যা করার আগামী ২ সপ্তাহে করতে হবে। ইরান-এর তত তাড়া নেই।

Read More

Author: Saikat Bhattacharya

International geopolitics General Unipolar vs Multi-polar 14-June-2025 by east is rising